ধারাবাহিক- নীলচে সুখ ( তৃতীয় ভাগ)

নীলচে সুখ
-সুজিত চট্টোপাধ্যায়

 

 

পর্ব-৭

নীল আর মানালি চাঁদের আলোয় হেঁটে চলেছে পাহাড়ি রাস্তায়। একটা বাঁক ঘুরতেই তারা দেখলো, পাহাড়ের কোলে একটা মন্দির। মন্দিরের চারপাশ বেশ আলো সাজানো। জেনারেটর ব্যবহার করা হয়েছে। আরও এগিয়ে গেল মন্দিরের কাছে। বেশ কিছু মানুষের ভীড়। সবাই স্থানীয়। সেখানেই হচ্ছে সেই ভজন গান। যা দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল। কাছে গিয়ে মূর্তির দর্শন করলো। দুর্গা মূর্তি। পার্বতী। পর্বতেই যায় আবাস। প্রণাম সেরে ঘুরে দাঁড়াল। এবার ফিরতে হবে। লজ থেকে অন্তত মাইল খানেক দূরে চলে এসেছে ওরা। সবাই নিশ্চয়ই চিন্তা করছে। অচেনা অজানা জায়গা। কাউকে তেমন করে কিছু বলে আসা হয়নি। মানালির বাবা মা দুশ্চিন্তা করবেন, তাতে আশ্চর্যের কী! ঠান্ডাও এখানে অনেক বেশি।
ঠিক তখনই একজন সাধু গোছের লোক, তাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন। সাদা দাড়ি গোঁফ। মাথায় সাদা লম্বা চুল। সাদা ধুতি আর গায়ে একটা সাদা শাল। অনেকটাই বয়স হয়েছে। হাতে একটা পিতলের থালা, তাতে কিছু পাহাড়ি ফুল আর খেজুর কিসমিস। মৃদু হেসে বললেন, ‘দুর্গামাঈ আপকা ভালা করে। লিজিয়ে, পরসাদ লিজিয়ে।’
ওরা অযাচিত এই আহ্বানে একটু কুন্ঠিত বোধ করলো। তারপর আড়চোখে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে নির্বাক সম্মতিতে, বাড়িয়ে ধরা থালা থেকে ইতস্তত ভাবে যৎসামান্য প্রসাদ তুলে নিলো।
লোকটি অত্যন্ত প্রসন্ন চিত্তে দুজনের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদের ভঙ্গিতে বললেন,
‘দুর্গামাঈ আপ দোনো কো সুখী রাখে, কুশল মঙ্গল রাখে। জয় দুর্গামাঈ।’
লোকটি ভীড়ের ভেতর চলে গেলেন।
ওরা ফেরার পথ ধরলো।
মন্দির চত্তরের বাইরে এসে, নীল বললো,
‘মানালি, তোমার কাছে রুমাল আছে?
মানালি অবাক হয়ে বললো, ‘হ্যাঁ আছে, কেন?’
নীল দাঁড়িয়ে গেল। বললো,’গুড,দাও।’
মানালি হাতের ছোট ব্যাগের ভেতর থেকে রুমাল বের করে এগিয়ে দিলো। নীল রুমালটা নিয়ে বললো, ‘এবার তোমার হাতের প্রসাদ আর ফুলগুলো এর মধ্যে রাখো।’ মানালি যন্ত্রচালিতের মতো তাই করলো।
নীল নিজেও তার হাতে ধরে রাখা ফুল, প্রসাদ রুমালের মধ্যে রেখে ভালো করে বেঁধে, মানালির হাতে ফেরৎ দিয়ে বললো,
‘নাও, যত্ন করে রাখো। এটা এখন আমাদের কৈফিয়ত কিংবা সাক্ষী যা খুশি বলতে পারো।’
মানালি কপাল কুঁচকে অবাক হয়ে বললো,
‘তার মানে?’
-‘তার মানে লজে ফিরে গেলেই বুঝবে। কতরকম প্রশ্নের মুখে পরবে জানো? কোথায় ছিলি, কোথায় গেলি, এতো দেরি কেন? উরিব্বাস!
সব প্রশ্নের মুশকিল আসান, এই দুর্গা মা’য়ের প্রসাদ। কী? কিছু ঢুকলো মাথায়?’
মানালি হি হি করে হেসে বললো, ‘যাঃ খালি ফাজলামো।’
নীল বললো, ‘তোমার কোন কলেজ যেন?’ -‘রামমোহন, কেন?’
-‘ওই তো, সেই জন্যেই, পড়তে আমার মতো প্রেসিডেন্সিতে, দু-দিনেই বোলচাল, মগজ সব অন্যরকম গল্প হয়ে যেতো।’
-‘আরে রাখো তোমার প্রেসিডেন্সি। ওখানে কি-হয় না হয় সবাই জানে। আমার বোলচাল মগজ ঠিক জায়গাতেই আছে।’
-‘আরে আমারই সামনে, আমার কলেজের কুৎসা! না না এ অসহ্য।’
-‘ঠিক আছে, তুমি তোমার অসহ্যতা নিয়ে সারারাত এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো। আমি চললাম।’
মানালি সত্যিই গটগট করে অন্ধকারে মধ্যে হাঁটতে শুরু করলো। নীল থতমত হয়ে পিছন থেকে বললো, ‘আরে, কী মুশকিল। আমি আসছি তো।’ মানালি সে কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে তার চলার গতি আরও বাড়িয়ে দিলো। নীল পিছন থেকে প্রায় ছুটে এসে মানালির হাত ধরে ফেললো।
মানালি একটুও সেই হাত ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করলো না। শুধু মুখে কৃত্রিম বিরক্তি ভাব এনে বললো, ‘প্রেসিডেন্সি..’
মানালির নরম হাত, নীলের শক্ত মুঠোয় ধরা। সেটা কী মানালির নিরাপত্তার কারণে, সাবধানতা! নাকি আবেগ দূর্বলতা ! কারণ যাই হোক, এক আশ্চর্য সুন্দর সুখানুভূতি স্নিগ্ধ ঝর্ণার মতো বয়ে যাচ্ছিলো, দুজনের মনের গহীনে, যা অব্যক্ত।
নীল, হালকা ধমকের সুরে বললো,’অন্ধকারে ঐভাবে কেউ দৌড়োয়! আছাড় খেলে বুঝতে মজা।’
মানালি একটু সময় চুপ করে থেকে বললো,
‘অন্ধকার পাথুরে রাস্তায় চলতে আমরা ভয় পাই। আঘাত লাগার ভয়। কিন্তু এটাও তো সত্যি, এই পথ আমাদের শিক্ষাও দেয়। জীবনের চলার পথ আলোকিত মসৃণ নয়। অনেক বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে চলতে চলতে আলোর দিশা পেতে হয়। তাই না?’
রাস্তায় মাঝে মধ্যেই বড়ো বড়ো ভাঙা গর্ত। বৃষ্টির জলে টইটম্বুর। আকাশের ভাঙা চাঁদের প্রতিবিম্ব সেই জলে এসে পড়েছে। যেন এই মায়াময় নির্জনতায় ওদের দুজনকে দেখবে বলে, জলের নিচে ঘাপটি দিয়ে বসে আছে। তিরতির করে বহে যাওয়া ঠান্ডা হাওয়ায় সেই জল কেঁপে কেঁপে উঠছে, কাঁপছে প্রতিবিম্ব।
নীল, সেই কম্পমান চাঁদের দিকে তাকিয়ে হালকা গলায় বললো, ‘তোমার সাবজেক্ট যেন কী?’
মানালি কপাল কুঁচকে বললো, ‘ফিলোসোফি কেন?’
নীল হাসতে হাসতে বললো, ‘না, এমনিই..:
মানালি ততক্ষণে বুঝতে পেরেছে, এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে, নীলের পিঠে চটাস করে একটা চাপড় মেরে বললো, ‘ইয়ার্কি হচ্ছে না, অসভ্য ছেলে।’
নীল এইবারে হো হো করে হেসে বললো,
‘মাফ করো, জুলজির মাথায় ফিলোসোফি ঢুকবে না। হা হা হা।’
নীলের অমন প্রাণখোলা হাসি দেখে, মানালিও স্থির থাকতে পারলো না। সেই হাসিতে সেও যোগ দিলো। হা হা হা…
তাদের সেই সম্মিলিত নির্মল হাসি, প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো রাত সুন্দরী পাহাড়ের নিঝুম কোলে কোলে।
সুন্দরী সিকিম, নব যৌবনের উচ্ছ্বলতায় আরও সুন্দরী হয়ে উঠলো।

কিন্তু, লজে অপেক্ষারতা মাতা সুন্দরী কী করেন সেটাই এখন দেখার।

পর্ব-৮

এখন রাত আটটা। ছোট্ট এই প্রায় জনমানবহীন পাহাড়ি গ্রামে মধ্যরাতের নিঃস্তব্ধতা। মিসেস রায় একা দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেয়ের আকুল প্রতীক্ষায়।
ছেলেগুলোকে জোর করেই পাঠিয়েছেন একটু এগিয়ে গিয়ে, যদি ওদের কোনও হদিস করা যায়, এই আশায়। একেই বলে উদ্বেগ। স্বাভাবিক।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলেরা ফিরে এলো। ওদের দেখা পায়নি। তবে অন্য খবর এনেছে। রাস্তা পরিস্কারের কাজ চলছে। আন্দাজ মতো কাল সকল নটার পরেই রাস্তা চালু হয়ে যাবে। যদি না আবারও নতুন করে ধ্বস নামে।
মিসেস রায় কথাগুলো শুনলেন বটে, কিন্তু বিশেষ উৎসাহ পেলেন বলে মনে হলো না।
শুধু একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে চলে গেলেন।
প্রফেসর চোখ বুঁজে শুয়ে একটু বিশ্রাম নেবার চেষ্টা করছিলেন। মিসেস রায়ের কথায় সে চেষ্টায় জল ঢেলে উঠে বসলেন। চাপা গলায় বললেন, ‘আরে..এতো মহা মুশকিল। আমি কী করলাম?’
মিসেস রায়ও একইভাবে বললেন,
‘তুমিই তো ওদের জোটালে। গায়ে পড়ে।’ -‘কেন? তুমিও সামনেই ছিলে। তুমি ওদের অফার, আই মিন প্রপোজাল দাওনি?
তাছাড়া এসব কথা উঠছে কেন? কোথায় কী রামায়ণ মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে?’
-‘তুমি চুপচাপ ঘরে বসে আছো কেমন করে? এতখানি রাত হলো, এই ভয়ঙ্কর জায়গায় মেয়েটা একটা সামান্য পরিচিত ছেলের সঙ্গে, ওফ্ফ.. কী কুক্ষণে এখানে এসেছিলাম। আসা থেকে দুর্ভোগ পিছু নিয়েছে। যাক, তুমি একবার বাইরে বেরিয়ে দেখবে, নাকি আমিই যাবো?’
-‘কেন? ওরা গেলো তো..’
-‘ওরা ফিরে এসেছে। দেখা পায়নি। রাস্তা সারাইয়ের খবর এনেছে।’
-‘তাই নাকি, বেশ ভালো। সারাইয়ের কাজ কী হয়ে গেছে?’
-‘তোমার যাবতীয় মুখোরোচক প্রশ্নের পছন্দের উত্তর পাশের ঘরে গেলেই পেয়ে যাবে। যাও পাশের ঘরে যাও। জমিয়ে বসে সবকিছু ঠিকঠাক জেনে এসো, যাও।’
-‘তুমি এভাবে কথা বলছো কেন? একটা কথা ব’লে রাখছি শোনো- আমি দীর্ঘদিন যাবৎ এইরকম তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে শিক্ষকতা করে কাটিয়েছি। আমি চিনতে ভুল করি না। তুমি যা কল্পনা করছো, তা একেবারেই ভুল। নতুন জায়গায় একটু ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে। বেড়াতেই তো এসেছে। ঘরে শুয়ে বসে থাকার জন্য তো আসেনি। এটাই স্বাভাবিক। আমার সেই বয়স থাকলে, আমিও এইরকম গ্যাঁট হয়ে ঘরে বসে অকারণ বকবক করে সময় নষ্ট করতাম না। সে অভিজ্ঞতা তোমার যথেষ্টই আছে।’
মিসেস রায় বুঝলেন, এইভাবে বলা তার উচিৎ হয়নি। মানুষটা মনে মনে দুঃখ পেয়েছেন।

পায়ে পায়ে খোলা জনলার ধারে এসে দাঁড়ালেন। অন্ধকারে বেশি দূর দেখা যায় না। মনের মধ্যেও একরাশ দুশ্চিন্তার অন্ধকার। মায়ের মন, সন্তানের জন্য ব্যাকুল হবেই। অনিচ্ছা সত্বেও দু’একটা অবান্তর অপ্রিয় কথা মুখ ফসকে বেরিয়ে যাবেই। উচাটন বাগ মানে না।
প্রফেসর আড় চোখে মিসেস রায়ের দিকে তাকিয়ে, পায়ে চটিটা গলিয়ে, বাইরে বেরুতে যাবেন ঠিক তখনই পাশের ঘর থেকে একটা সমবেত কোলাহল ভেসে এলো।
-‘ এই এসে গেছে। কোথায় গিয়েছিলি এতক্ষণ? বলে যাবি তো।’
প্রসেসর বাইরে বারান্দায় বেরিয়ে এলেন,
‘মানালি তুমি মায়ের কাছে যাও। উনি তোমার জন্য খুবই চিন্তা করছিলেন। যাও।’
মানালি বাবার পাশ দিয়ে ঘরে চলে গেল। মিসেস রায় তখনও একইভাবে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে, বাইরের দিকে তাকিয়ে আছেন।
মানালি কাছে গেল না। সামান্য দূর থেকে আদুরে গলায় বললো, ‘মা, তুমি রাগ করেছো?’
মা তখনও একটুও নড়লেন না। শুধু নির্বাক নিশ্চলভাবে এক আশ্চর্য রকম চোখে মানালির দিকে তাকিয়ে রইলেন।
সেই দৃষ্টিতে রাগ, স্নেহ, অভিমান আর স্বস্তির নিবিড় বন্ধন ছিল একাকার হয়ে। ছলছল চোখে বললেন, ‘মানালি এমন করিস কেন বল তো! কী পাস, আমাকে এমন করে কষ্ট দিয়ে।’
মানালি ছুট্টে গিয়ে মাকে জাপটে ধরে বললো, ‘আর কখনও হবে না মা। প্লিজ..’ কথা শেষ হলো না, গলা বুঁজে এলো।
বোধকরি এটুকুই যথেষ্ট ছিল। মমতার কাছে নত হওয়াই জগতের নিয়ম।
মা তার সন্তানকে সজোরে বুকের মাঝে টেনে নিয়ে, অশ্রুসজল চোখে বললেন, ‘আমি যে বড়ো ভয় পাই মানালি, আমি যে বড্ড ভীতু।’ মানালি মা’য়ের বুকে মাথা রেখে বললো, ‘মা আমার ওপর তোমার বিশ্বাস নেই! বিশ্বাস নেই মা?’
মা আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলেন না। ডুকরে কেঁদে উঠলেন। বুকের মাঝে জমে থাকা পাথরগুলো যেন বুলডোজার দিয়ে ধাক্কা মেরে কেউ সরিয়ে দিলো, আর সেই সরে যাওয়া পাথরের ফাঁক গলে পবিত্র ঝর্ণার ধারা কুলকুল শব্দে নদীর পানে ছুটে গেল।
মায়ের অশ্রু ভেজা গাল নেমে এলো, মেয়ের মাথায়। মানালির ডাগর দুটি চোখেও টলমল করছে জল।
পাইন গাছের পাতায় লেগে থাকা বৃষ্টির জল, তখনও গড়িয়ে গড়িয়ে ঝরছে ভিজে পাহাড়ের গায়ে, টপটপ, টপটপ।
পাশের ঘরে ব্রজেশ ভরাট উদাত্ত গলায় গান ধরেছে,
“এ তুমি কেমন তুমি
চোখের তারায় আয়না ধরো,
এ কেমন কান্না তুমি
আমায় যখন আদর করো..”

পরদিন সবাই খুব সকালে উঠে পরেছে। ড্রাইভারের সঙ্গী এসে জানিয়ে গেছে। রাস্তা খুলে গেছে। ব্রেকফাস্ট করেই রওনা দেওয়া হবে, লাচুন লাচেন-এর পথে।
নীল আর তার বন্ধুরা একটু আগেই সেই ধ্বসের জায়গা দেখে এসেছে। প্রফেসর ওদের সঙ্গে লজের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাদের কাছে ধ্বসের খুঁটিনাটি বিবরণ জানছেন।
এতক্ষণে জানা গেল, এই জায়গার নাম মানগাং। মনে রাখবার মতো জায়গা।

মানালি আর মিসেস রায়ও রাস্তায় নেমে এলেন। এখন সবাই যাবার জন্য তৈরি। গাড়িটা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ মানালি তার মাকে শিশুসুলভ সরলতায় বললো, ‘মা, একবার হাঁ করো।
মিসেস রায় কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বললেন, ‘কেন?’
-‘আহঃ, যা বলছি করো না। হাঁ করো।’
মিসেস রায় খানিকটা অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে মেয়ের আদেশ পালন করতে, হাঁ করলেন।
মানালি সেই হাঁ-এর মধ্যে একটা কিশমিশ টুক করে ফেলে দিলো।
মিসেস রায় সেটাকে বারদুই চিবিয়ে নিয়ে, অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘কী এটা?’
মানালি রুমালে বাঁধা গতরাতের দুর্গামাঈ-এর প্রসাদ মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, ‘পাহাড় পার্বতীর প্রসাদ। সবাইকে দাও। বাবাকেও।’
মিসেস রায় তেমন কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না। তবুও রুমাল শুদ্ধ প্রসাদ কপালে ঠেকিয়ে নিয়ে, ছেলেদের দিকে এগিয়ে গেলেন।
তন্ময় বললো, ‘কাকীমা কালরাতে ওরা তো ওই মন্দিরেই গিয়েছিল। তারই প্রসাদ।’
প্রফেসর হেসে বললেন, ‘বাব্বা, এই পাহাড়ি জঙ্গলে মন্দিরও খুঁজে বের করে ফেললি তোরা।এ তো দস্তুরমত একটা আবিষ্কার বলা যেতেই পারে। নাঃ মানতেই হচ্ছে, তোদের ক্যালি আছে।’
মিসেস রায় প্রফেসরের মুখে একটা কিশমিশ দিয়ে দিলেন। প্রফেসর মুখে প্রসাদ নিয়ে, বালককের মতো মুঠো বদ্ধ হাত আকাশ পানে ছুঁড়ে চিৎকার করে বললেন, ‘দুর্গামাঈ কী জয়।’
সবাই হৈ হৈ করে হেসে উঠলো।
মানালি আর নীল দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে, সেই হাসিতে যোগ দিয়ে, প্রফেসরকে নকল করে চিৎকার করে বললো, ‘দুর্গামাঈ কী জয়।’
ড্রাইভার বললো, ‘সবাই গাড়িতে বসুন। দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
সবাই গাড়িতে বসতেই, চলতে শুরু করলো গাড়ি। জানালা দিয়ে সবাই শেষ বারের মতো, প্রাণ ভরে দেখছিল, অখ্যাত আশ্চর্য সুন্দরী মানগাং-কে।
বিদায় রুপসী মানগাং। একটি মাত্র রাত। তাও অযাচিত আকস্মিক ঘটনায় অসহায় ভাবে তোমার ছোট্ট কোলে আশ্রয় নেওয়া। তোমার কাছে যা পেলাম, সারাজীবন মনের মনিকোঠায় উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে।

গাড়ি মাত্র মিনিট পনেরো গড়িয়েছে। তখনই ঘটে গেল একেবারে ভয়াবহ ঘটনা। যার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। থাকার কথাও নয়।

চলবে……..

Loading

Leave A Comment